জন্মনিবন্ধনে মা বাবার সনদ আর লাগবে না / birth certificate online
জন্মনিবন্ধনে মা বাবার সনদ আর লাগবে না ।। birth certificate online,জন্ম নিবন্ধন করতে লাগবে না মা-বাবার জন্ম সনদ,পিতা মাতার সাথে জন্মনিবন্ধন ম্যাপিং,
এখন থেকে জন্ম নিবন্ধনের জন্য বাবা-মায়ের জন্ম শংসাপত্রের আর প্রয়োজন হবে না। নিয়ম কার্যকর হওয়ার দেড় বছরেরও বেশি সময় পর বাবা-মায়ের জন্ম সনদ বাধ্যতামূলক করে তা তুলে দেওয়া হয়।
রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বলছে, ২৭ জুলাই থেকে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার সময় সফটওয়্যারটি বাবা-মায়ের জন্ম সনদ চাইবে না। এতে তালাকপ্রাপ্ত পরিবারের শিশুরা, যাদের মা বা বাবার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই এবং পথশিশুদের জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত জটিলতায় ভোগান্তি কাটবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় বলছে, এখন থেকে হাসপাতালে জন্মের পর দেওয়া সনদ বা টিকাদানের সনদ দেখিয়ে শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা যাবে।
এই নিয়ম আগে কার্যকর ছিল। তবে 1 জানুয়ারী, 2021 থেকে, নিয়ম পরিবর্তন করে বলা হয়েছিল যে 2001 সালের পরে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিদের জন্ম নিবন্ধনের জন্য পিতামাতার জন্ম সনদ আবশ্যক। সে সময় নিবন্ধন করতে গিয়ে বিভিন্ন ভোগান্তির কথা বলে অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জন্ম
জন্মসনদ পেতে জটিলতা
এ নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, 'বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে হবে কেন?
রেজিস্ট্রার জেনারেল মির্জা তারিক হিকমত বলেন, জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে বাবা-মায়ের জন্ম নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা মওকুফ করা হয়েছে। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, 'আগামী ২৭ জুলাই থেকে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন নেওয়ার সফটওয়্যারে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন যারা সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন, তাদের কাছে আগের মতো বাবা-মায়ের জন্ম সনদ চাওয়া হবে না।
তবে আগের নিয়মের যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, "জন্ম নিবন্ধনের আন্তর্জাতিক ব্যবহার সম্পর্কে জানার কারণে, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করার জন্য পিতামাতার জন্ম সনদ চাওয়া হয়েছিল। এভাবে 3 মিলিয়ন শিশুকে একটি ইউনিক আইডি। এটা ছিল বাবা-মায়ের সাথে সন্তানকে পরিচিত করার একটি পদ্ধতি। বাবা-মায়ের জন্ম শংসাপত্রের বাধ্যবাধকতা ত্যাগ করলে সেই সুযোগ নষ্ট হয়ে যাবে।'
নতুন নিয়ম কীভাবে কার্যকর করা হচ্ছে নতুন নিয়ম সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়নি। সিস্টেম থেকে সরানো পিতামাতার বাধ্যতামূলক জন্ম শংসাপত্র. আবেদন করলেই বোঝা যাবে। এর আগে গত বছর এ নিয়ম কার্যকর হলেও ওই সময়ে কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়নি।
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, জন্ম সনদ পেতে সন্তানদের হয়রানি।
তালাকপ্রাপ্ত বাবা-মা এবং পথশিশুদের সন্তানদের বিষয়ে কী করা হবে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, এই আবেদনগুলো বিশেষ বলে বিবেচিত হয় এবং নাগরিকরা সরাসরি অনলাইনে আবেদন করতে পারে না। আবেদন করতে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) বা নিবন্ধন অফিসে যেতে হতো। যেহেতু পিতামাতার জন্ম শংসাপত্র আর বাধ্যতামূলক নয়, তাই এই জাতীয় পরিবারের শিশুরা এখন থেকে সাধারণত অনলাইনে আবেদন করতে পারবে। তবে পথশিশুদের ক্ষেত্রে যারা তাদের বাবা-মায়ের নাম বলতে পারে না, তাদের নিবন্ধন অফিসে গিয়ে আগের মতোই আবেদন করতে হবে।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালা, 2018-এর ধারা 3 (c) অনুসারে, যদি কোনও ব্যক্তি এতিম, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ, পিতামাতা অজানা, পরিচয়হীন, বেদে, ভবঘুরে, পথচারী বা ঠিকানাহীন বা যৌনকর্মী হন তবে তথ্য 'অনুপলব্ধ'। . জন্ম ও মৃত্যু লিখিতভাবে নথিভুক্ত করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে, নিবন্ধক তথ্যের অভাবে জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন প্রত্যাখ্যান করতে পারেন না।
দুঃখী মানুষ সুখী হয় একটি কিশোর সন্তান এবং তালাকপ্রাপ্ত বাবা-মায়ের সাত পথশিশুর বিষয়ে একাধিকবার প্রতিবেদন করেছে। গত ১০ মে 'প্যারেন্টাল সেপারেশন, হ্যারাসমেন্ট অব চিলড্রেন টু গেট বার্থ সার্টিফিকেট' শিরোনামে প্রতিবেদনে লেখা হয়, তালাকপ্রাপ্ত বাবা-মায়ের এক কিশোরী শিশু খালার কাছে বড় হয়েছে।
ছোটবেলায় তার মা মারা যায় এবং তার বাবার সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। ফলে মেয়ের ডিজিটাল জন্ম সনদ নিতে হয়রানির শিকার হন পরিবার। বাবার জন্ম সনদ চাওয়া হচ্ছিল এবং না পাওয়া গেলে 'অজানা বা অনুপলব্ধ' লিখে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। মেয়েটির খালু জানান, অজানা বা অপ্রাপ্য লেখার ফলে মেয়েটির কোনো পৈত্রিক পরিচয় নেই বলে ধারণা জন্মাতে পারে।
তারা এতে রাজি হচ্ছিলেন না। বাবা-মায়ের জন্ম সনদের বাধ্যবাধকতা উঠে যাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে মেয়েটির চাচাতো ভাই কে বলেন, এটা অনেক ভালো কাজ হয়েছে। হয়রানির হাত থেকে বাঁচবেন অনেকেই।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাত পথশিশুর জন্ম সনদ নিয়ে জটিলতা তুলে ধরে 'স্ট্রিট চিলড্রেন ওয়ার্ল্ড কাপ: জন্ম শংসাপত্র পাওয়ার জটিলতা' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে তিন শিশুকে চলতি বছরের অক্টোবরে কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পথশিশুদের বিশ্বকাপে যাওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের পাসপোর্টে জন্মনিবন্ধন সনদ লাগবে। আর স্কুলে ভর্তির জন্য বাকি চার সন্তানের জন্ম সনদ প্রয়োজন ছিল।
সাত শিশু বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ স্থানীয় শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থার (লিডো) আশ্রয়ে থাকে। লিডোর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক বলেন, বাবা-মায়ের নামের জায়গায় 'অজানা বা অপ্রাপ্য' উল্লেখ করা নিয়ে আপত্তির কারণে সাত শিশুর জন্ম সনদ পাওয়া যায়নি। ফরহাদ হোসেন।
জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত নতুন নিয়ম প্রসঙ্গে ফরহাদ হোসেন বলেন, তিন সন্তানের পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা এখনো সমাধান হয়নি। কারণ ই-পাসপোর্টের আলাদা নিয়ম রয়েছে। তবে নতুন নিয়মের কারণে স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে শিশুদের জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত জটিলতা কমতে পারে। তিনি বলেন, জন্ম নিবন্ধনের নতুন নিয়ম সম্পর্কে আমি এখনও স্পষ্ট কিছু জানি না। আবেদন করার সময় নতুন কোনো শর্ত থাকলে আমি বুঝব।
গত ১২ জুন, স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্স বাংলাদেশ (এসএইচআই) নামে একটি বেসরকারি সংস্থার পক্ষে আইনজীবী তাপস কান্তি বল পথশিশুদের জন্ম সনদ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জুন হাইকোর্ট এক রায়ে দেশের ১ লাখ ৬ হাজার পথশিশুকে জন্ম সনদ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং পথশিশুদের জন্ম সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছিলেন।
এ প্রসঙ্গে আইনজীবী তাপস কান্তি বল বলেন, সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, জন্ম নিবন্ধন অধিদপ্তরের কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে নিলে এসব শিশু উপকৃত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, পথশিশুদের জন্ম সনদ নিয়ে জটিলতা নিরসন না হলে প্রয়োজনে রাজপথে নেমে আন্দোলন করবেন। নতুন নিয়ম সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যা হওয়ার কথা ছিল তাই হয়েছে। শিশুবান্ধব সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
অভিভাবকহীন শিশুদের অভিভাবক হয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশ সেই পথ থেকে বিচ্যুত হয়। এটা আমলাতন্ত্রের কারণে। আরও অনেক ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্র দেশকে বিপথে নিয়ে গেছে। তবে বঙ্গবন্ধুর মানসিকতার রাজনীতিবিদদের কাছে সমস্যাগুলো তুলে ধরলে তারা তা মেনে নেন। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
Post a Comment